আকাশে আজ মেঘ জমে আছে, মনে হচ্ছে আকাশের মন খারাপ। কোন কারণ ছাড়াই যে কোন সময় কেঁদে ভাসিয়ে দিবে সমস্ত শহর। সাথে বইছে মৃদু বাতাস, এই বাতাসটা উপভোগ করার মত। হিবু আজকাল বিকেল থেকে সন্ধ্যা ছাদে থাকতে পছন্দ করে। দুদিন আগেও ছেলেটা বিকেল বেলা মেতে থাকতো বন্ধুদের নিয়ে, সে এখন ছাদ ছাড়া কিছুই বোঝে না। হিবু আজকের আবহাওয়া খুব উপভোগ করছে। দুহাত ছড়িয়ে দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝে মধ্যে বিশ গজ দুরের একটা ছাদে উকি মারছে। রহস্য তাহলে এখানেই, ওই ছাদেও বিকেল থেকে সন্ধ্যা একটা কিশোরী উঠে। হিবু খুব সম্ভবত সে কারণেই আজকাল ছাদে আসছে। হিবু খেয়াল করলো আজ আর সেই মেয়েটা ছাদে আসেনি, একটু পরেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হলো। হিবু নিচে চলে গেল। রাতে পড়ার টেবিলে বসে বসে শুধু মেয়েটার কথাই ভাবছে, আজ কেন আসলো না? শরীর খারাপ? নাকি মন খারাপ? যদি একবার জানা যেত তাহলে একটু শান্তি লাগতো। এই তো কয়েকদিন আগেও হিবু এমন ছিলো না। কাউকে নিয়ে ভাবার সময় কই? সারাদিন স্কুল, খেলা আর কবিতা এইতো বেশ কাটছিলো। হঠাৎ সেদিন ছাদে উঠে একটু দুরের ছাদটাতে চোখ পরতেই আটকে গেলো হিবু। কি সুন্দর! এতো সুন্দরী একটা মেয়ে, দেখলেই প্রেমে পরতে ইচ্ছে হয়। কি সুন্দর চোখ, মুখের হাসি। হিবু শুধু দেখেই যাচ্ছে। এরপর বিকেলে ছাদে উঠেই হিবু অবুঝের মত মেয়েটাকে দেখে। কিন্তু আজ না আসাতে এখন কিছুই ভাল লাগছে না। হিবু ক্লাসের বই বন্ধ করে হুমায়ূন আহমেদ এর ইস্টিশন বইটি পড়ছে। এই বইটা হিবু অন্তত কুড়িবার পড়েছে। তবুও কেমন যেন একটা টান বইটার উপর, কেন শেষ হয়ে গেলো? আর কয়েক পাতা লেখলে কি এমন হতো? কলমের কালি তো আর শেষ হয়ে যেতো না। যাই হোক চোখে শুধু মেয়েটার হাসি আটকে গেছে। হিবু আজকাল মানিব্যাগে ক্যাটরিনা কাইফ এর ছবি রাখা শুরু করছে। ক্যাটরিনাকে অনেক ভালো লাগে হিবুর। ছাদের দেখা মেয়েটাকেও এখন ক্যাটরিনা কাইফ মনে হচ্ছে। একটু পরেই হিবু হাতে রিমোট নিয়ে নাইনএক্সএম চ্যানেলে গান দেখছিলো। হঠাত ওয়েলকাম মুভির “কিয়া কিয়া ক্যায়া, কিয়া ক্যায়া,কিয়ারে সানাম” গানটি আসলো। এখানে যেনো ক্যাটরিনা কাইফ আর অক্ষয় কুমার না, এখনে হিবু আর ছাদের সেই মেয়েটি। হিবু একটু একটু লজ্জা পেয়ে হাসলো। সকালে আবার স্কুলে যেতে হবে হিবুকে। কালকে ক্লাস টেস্ট আছে। প্রতি বৃহস্পতিবার এই শ্রেণি পরিক্ষা হয়। হিবু স্কুলে যাওয়ার সময় দেখলো সেই মেয়েটা, কিন্তু মেয়েটার ইউনিফর্ম খুব চেনা। আজিমপুর গার্লস এর। তারমানে মেয়েটা কলেজে পড়ে আর হিবু মাত্র ক্লাস এইট! কি একটা অবস্থা, হিবুর খুব কষ্ট লাগলো। এইরকম একটা সুন্দর মেয়ে ওর থেকে সিনিয়র, অবশ্য সিনিয়র আপুরা ভাল আদর করে। হিবু ক্লাস এইটে ওঠার পরে যখন একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে স্কুল থেকে র্যালি বের করে তখন কলেজের একটা আপু হিবুকে কালো কাপড়ের ব্যাচ শার্টে সেফটিপিন দিয়ে লাগিয়ে দিয়েছিলো আর হিবুকে দুহাতে গাল টিপে দিয়েছিলো। র্যালি শেষ করে কলেজের ক্লাসে এসে সবাই বসে, হিবুকে তখন ওই আপুটা ডেকে পাঠায়। হিবু সামনে যাওয়ার পরে আপুটা তার বান্ধবীকে দেখায় হিবুকে, আপুর বান্ধবী হিবুকে কিউট বলে গালে একটা চুমু দিয়ে বসে। হিবুর কাছে এটা নতুন কিছু না, এইরকম বড় আপুদের কাছ থেকে অনেকবার চুমু পেয়েছে। যাইহোক হিবু ভাবছে অন্যকিছু। বিকেলে ছাদে উঠেই দেখে মেয়েটা ছাদেই আছে। হিবু তাকাতেই দেখে মেয়েটাও হিবুকে দেখছে। মেয়েটা হিবুকে হায় দেখালো, হিবু অন্যদিকে তাকালো। মেয়েটা হাসছে, হিবু চোখ বাকিয়ে আবার দেখলো, এখনও মেয়েটা হিবুকে ইশারায় ঢাকছে। হিবু এবার সাহস পেয়ে হায় দিলো। কিন্তু কথা বলার কোন পথ নেই। কারণ এই দুরত্বে কথা বলা যাবে না। আজকে হিবু অনেক খুশি, খুশিতে যেন অজ্ঞান হয়ে যাবে। হিবুর আজ সবকিছুই ভাল লাগছে। পরদিন হিবুর স্কুল ছুটি কারণ শুক্রবার। হিবু ওই মেয়েটার বাড়ির সামনে গেলো। অনেক্ষণ এদিক সেদিক হাটাহাটি করে দেখলো মেয়েটা বাড়ির গেট দিয়ে বের হচ্ছে। মেয়েটা হিবুর দিকে তাকালো। মেয়েটা হিবুকে জিজ্ঞেস করলো, এখানে কেন? হিবু বললো এমনিতেই আজকে স্কুল ছুটি তাই হাটাহাটি করছে। মেয়েটা হিবুর নাম জানতে চাইলো এবং মেয়েটার নাম তানিয়া বললো। হিবু মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হাসলো এবং বললো আপনি আজিমপুর গার্লস এ পড়েন? মেয়েটা বললো তুমি কিভাবে জানো? আমার পিছনে যাও নাকি? হিবু হাসি দিয়ে বললো না আমি দেখছি গতকাল। মেয়েটা হিবুকে বললো তুমি অনেক কিউট তো, কোন ক্লাসে পড়ো? ক্লাস এইটে হিবু জানালো।
—দেখে তো মনে হয় কাস সিক্সে পড়ো, সত্যি কি এইটে?
—সত্যি আমি ক্লাস এইটে পড়ি।
—যাক ভালো, তাহলে তো আর হবে না।
—কি? কি হবে না?
—আচ্ছা শোনো আমার একটা কাজ করে দিতে পারবে? কাউকে বলবে না।
—কি কাজ?
—বিকেলে এসো, তখন বলবো।
হিবু চলে আসলো। হিবু বিকেলের অপেক্ষা করছিলো। বিকেল হতেই হিবু আবার চলে আসলো। একটু পরেই তানিয়া বের হয়ে আসলো। হিবুকে দেখে একটু হাসি দিয়ে হিবুর কাছে আসলো।
—এই চিঠিটা তোমাদের বাড়ির নিরব কে দিবে। তুমি কিন্তু খুলবে না। এই চিঠিটা দিলে তোমার জন্য একটা গিফট আছে।
হিবু ঠিক আছে বলে চলে আসলো। হিবু ভাবছে তাহলে কি নিরব ভাইয়ার সাথে তানিয়ার প্রেমের সম্পর্ক আছে। খুব খারাপ লাগছে তানিয়ার জন্য, কারণ নিরব ছেলেটা ভাল না। অন্য একটা মেয়ের সাথে খারাপ সম্পর্ক আছে হিবু জানে কারণ নিরব হিবুর সাথে সব বলে। সিগারেটও খায় নিরব। হিবু চিঠিটা নিয়ে খুলে পড়ে। চিঠি পড়ে হিবুর চোখ কপালে উঠে যায়। তানিয়া নিরবের কাছে রিকুয়েস্ট করছে যেন ওকে বিয়ে করে নয়তো ওর আত্মহত্যা ছাড়া কোন পথ নেই। তানিয়া এখন প্রেগন্যান্ট! চিঠি পড়ে হিবু জানতে পারে কয়েকদিন ধরে নিরব তানিয়ার সাথে যোগাযোগ রাখে না। হিবু কি করবে বুঝতে পারেনা। হিবু নিরবকে চিঠিটা দেয়। নিরব হিবুকে বলে কাউকে যেন এই চিঠির বিষয়ে না বলে।
হিবু আর তানিয়ার সাথে দেখা করেনি, হিবু এখন ছাদেও খুব বেশি উঠে না।
এরপর প্রায় দেড় বছর কেটে যায়। হঠাৎ একদিন বৃষ্টির মধ্যে তানিয়ার সাথে হিবুর দেখা হয়। কোলে একটি বাচ্চা সাথে তানিয়ার থেকে বয়সে অনেক বড় একটা লোক। হিবু কোচিং শেষ করে বৃষ্টির কারণে একটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। তানিয়াকে দেখে হিবু একটা হাসি দেয়। তানিয়া লোকটির সাথে হিবুকে পরিচয় করিয়ে দেয়। লোকটি বিদেশে থাকে দেড় বছর আগেই ওদের বিয়ে হয়। একটা ছেলে হয়েছে নাম তানজিম। ছেলেটা দেখতে অনেকটা নিরব ভাইয়ার মত। হিবু প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে বৃষ্টির মধ্যে হাটতে হাটতে ভাবছে। মেয়েরা কত অভিনয় জানে, কত সুন্দরভাবে একজনের সন্তানকে অন্যজনের বানিয়ে দিলো। কত রহস্যময় এই পৃথিবী আর মানুষ তার চেয়েও বেশী রহস্যময়। নিরব ভাইয়াও আজকাল মাদকাসক্ত হয়ে পরেছে। কয়েকবার জেল খেটেছে মাদক নিয়ে ধরা পরে। হিবু ভাবছে, আসলেই যা হয় ভালোর জন্যই হয়।
হিবুর বাল্য প্রেম (গল্প) – হাবিব রনি

অনেক সুন্দর হইছে লেখাটা,
হিবুর এখন কি অবস্থা..?
হিবুর বর্তমান অবস্থা জানতে সাথেই থাকুন। খুব শীঘ্রই হিবু তার নিজেকে উপস্থাপন করবে।